কুষ্টিয়ায় সাংবাদিকের উপর হামলা ও বেধরক মারপিট

স্টাফ রিপোর্টার :  ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকার সহ-সম্পাদক খন্দকার সোহেল টানুর উপর হামলা চালিয়ে বেধরক মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। গত ২১ আগষ্ট রাত আনুমানিক ১১টার সময় শহরের বটতৈল বাইপাস সংলগ্ন আলামিন হোটেলের ভিতরে এই সাংবাদিকের উপর হামলা চালানো হয়।

এঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে ৬ জন আসামির নাম উল্লেখ করে এবং ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। নাম উল্লেখিত আসামীরা হলেন- ১। মোঃ রবিন (৩০), পিতা-বারেক আলী, ২। মোঃ নাকিব (২৫), পিতা-মনোয়ার ইসলাম বাবু, ৩। আব্দুর রহিম (২৪), পিতা- জহুরুল ইসলাম, ৪। মোঃ সায়েম (২৬), পিতা-মোঃ তাজু, সর্বসাং-চৌড়হাস (উপজেলা রোড), ৫। মোঃ পলাশ (ড্রাইভার) (২৪), পিতা- অজ্ঞাত, সাং- দহকুলা, ৬। মোঃ মুক্তার হোসেন (৪০), পিতা-অজ্ঞাত, সাং-বটতেল, সর্ব থানা ও জেলা-কুষ্টিয়া।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক তার দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আমি দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকার সহ-সম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন বটতৈল বাইপাস মোড়স্থ আদিয়ান হোটেল কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে বাইপাস সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং করার কারনে সড়কে দুর্ঘটনা সহ নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে আনুমানিক ২ মাস পূর্বে দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকায় "সড়ক আইন না মেনে কুষ্টিয়া ড্রাইভার হোটেল" শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করি। উক্ত সংবাদ করার কারনে আদিয়ান হোটেলের মালিক ৬নং আসামী মুক্তার হোসেন আমার উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং আমার ক্ষতি করার পায়তারা করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ আগষ্ট তারিখ রাত্র আনুমানিক ১১.০০ টার সময় কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন বটতেল বাইপাস মোড়স্থ আল আমিন হোটেলের মধ্যে খাবার খাওয়ার জন্য অবস্থান করছিলাম। এমন সময় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে উল্লেখিত ১নং হতে ৫নং আসামীগণ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিকস সেন্টারের তত্ত্বাবধায়নে কিয়াম সিরাতুন্নেছা মেমোরিয়াল ট্রাস্টের একটি এ্যাম্বুলেন্স যোগে আল আমিন হোটেলের সাথে লাগোয়া ৬নং আসামীর মালিকানাধীন আদিয়ান হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ায়। তখন তারা ৬নং আসামীর সাথে পরামর্শ করে তার হুকুমে ১নং হইতে ৫নং আসামীগণ বেআইনী জনতাবদ্ধে আল আমিন হোটেলের মধ্যে প্রবেশ করে আমার নাম ধরিয়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করিতে থাকে। তখন আমি আসামীদের গালিগালাজ করিতে নিষেধ করিলে উল্লেখিত আসামী সহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতারী কিল, ঘুষি, চড় থাপ্পড় মারিয়া নীলাফোলা রক্ত জমাট জখম করে। ১নং আসামী মোঃ রবিন (৩০) আমার গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা চেষ্টা করে। তখন আমি কোন মতে নিজেকে ছুটাইয়া নিলে ১নং ও ২নং আসামীদ্বয় যোগসাজসে আমার কাছে নগদ ১২,২০০/-টাকা এবং আমার ডান হাতে থাকা ৫ আনা ওজনের স্বর্ণের আংটি, যাহার মূল্য অনুমান- ২৬,০০০/-টাকা নিয়ে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংবাদিক সোহেল টানু হোটেল থেকে খাবার নেওয়ার জন্য বটতৈল বাইপাস সংলগ্ন আলামিন হোটেলের মধ্যে অপেক্ষারত ছিলেন। হঠাৎ ১০/১২ জনের এক হামলাকারী দল এসে তার উপর হামলা চালায় এবং বেধরক মারপিট করে। ঘটনাগুলো হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার পরিষ্কার ভাবে ধরা পড়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজনের নাম পরিচয় জানা গেছে এবং অন্যদের নাম পরিচয় সনাক্ত করতে কাজ চলছে।
এদিকে হামলার পর আলামিন হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার রেকর্ডিং ফুটেজ সাংবাদিকদের হাতে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়ার সাথে সাথে সাংবাদিকের উপর অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে জেলার সর্বস্তরের সাংবাদিকবৃন্দ। কিছুক্ষণের মধ্যেই আহত টানুকে দেখতে হাসপাতালে উপস্থিত হন সাংবাদিকরা। পরবর্তীতে হাসপাতাল থেকে সাংবাদিকদের একটি দল আহত টানু সহ কুষ্টিয়া মডেল থানায় উপস্থিত হন।
এসময় মডেল থানায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরন্নবী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু, দপ্তর সম্পাদক নাহিদ হাসান তিতাস সহ উপস্থিত সাংবাদিকরা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে জরুরী বৈঠক করেন এবং যত দ্রুত সম্ভব হামলাকারীদের আটক করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
এই ঘটনায় হামলাকারীদের একজনতে আটক করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটক ঐ ব্যক্তির নাম রাহিম শেখ। সে সদর উপজেলা পরিষদ মোড়ের বাসিন্দা। এই রাহিম সহ উল্লেখিত আসামীদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে চুরি ছিনতাই সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ওসি অপারেশন দীপেন্দ্রনাথ প্রতিবেদককে জানান, সাংবাদিক খন্দকার সোহেল টানুর উপর হামলাকারীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আইন অনুযায়ী হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।